প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জয় বাংলা’ আমাদের মুক্তির স্লোগান, আমাদের সংগ্রামের স্লোগান। জয় বাংলা স্লোগানের মধ্য দিয়ে আমরা বিজয় অর্জন করেছি।
সোমবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যায় ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত ‘জয় বাংলা’ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সারাজীবন উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশের মানুষের জন্য। যে মানুষগুলো ক্ষুধা-দারিদ্র্যে জর্জরিত ছিল। সবদিক থেকেই বঞ্চনার শিকার ছিল। সেই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য জাতির পিতা তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ৬ দফা থেকেই তিনি কিন্তু নির্দেশ দিলেন জয় বাংলাকে মাঠে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা যখন ছাত্রলীগের কর্মী তখনই, কিন্তু তিনি জয় বাংলা স্লোগানকে মাঠে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। এর মধ্যে যে অর্থ নিহিত ছিল, তা হচ্ছে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করা এবং এই স্লোগানের মধ্যে দিয়েই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় অর্জন।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটি পদক্ষেপ তিনি নিয়েছিলেন অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। যে কারণে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি। জাতির পিতা শুধু যে স্বাধীনতা দিয়েছেন তা নয়; তিনি সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। আমাদের স্থল সীমানা করে দিয়ে গেছেন তিনি। মাত্র ৯ মাসের মধ্যে তিনি আমাদের একটি সংবিধান দেন। সেই অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার দিক নির্দেশনা তিনি দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান আমাদের মুক্তির স্লোগান, আমাদের সংগ্রামের স্লোগান। জয় বাংলা স্লোগান মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান। জয় বাংলা স্লোগানের মধ্য দিয়ে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। যে স্লোগান আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের বুকে এত শক্তি দিয়েছিল তারা শত্রু মোকাবিলা করতে এক সেকেন্ডও দ্বিধা করেনি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন এখানে গণহত্যা চালাচ্ছে, নির্যাতন চালাচ্ছে, যখন মুক্তিযোদ্ধারা ধরা পড়েছে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কেউ ধরা পড়েছে তাদের উপরে নির্যাতন করে এ জয় বাংলা স্লোগান যেন না দেন। কিন্তু তারা জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে, বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে আমাদের বিজয়ের পথ সৃষ্টি করে দিয়ে গেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা বিজয় অর্জন করার পর সেই স্লোগানটিই আর কারো কাছে থাকল না। এটা কোন কথা হলো? সেটাই আমরা দেখেছি ১৯৭৫ সালের পর।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু সম্পূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তার ভাষণে গেরিলা যুদ্ধ করার দিকনির্দেশনা যেমন ছিল, তেমনি স্বাধীনতা কথা বলে গেছেন। অপরদিকে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের কথা বলে গেছেন। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। ‘জয় বাংলা’ বলে তিনি ভাষণ শেষ করেছিলেন। বাঙালির যে জয় হবে সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন। তার এই দূরদর্শিতা ছিল আমাদের সকল অর্জনের মূল শক্তি এবং তিনি সেটাই করে গেছেন। বারবার বাধা, বারবার কারাবরণ করেছেন, তাকে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। পাকিস্তানিরা রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দিয়ে ফাঁসির আদেশ পর্যন্ত দিয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি না পৃথিবীর কোনো দেশে এমন আছে কি না স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরের মধ্যে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলে, সেটিকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে উন্নীত করে রেখে যান। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, আমাদের মুক্তি সংগ্রামের সময় যেমন অপপ্রচার চলছিল, স্বাধীনতা অর্জনের পরেও সেটা থেমে থাকেনি। স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্রান্ত সবসময়ই ছিল। অনেক ষড়যন্ত্র করেও তারা মানুষের হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধু নাম মুছতে পারেনি। তখনই কিন্তু চরম আঘাত এলো। ১৫ই আগস্ট, সেদিন শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করেনি। সারাটা জীবন পাশে থেকে সহযোগিতা করেছিলেন আমার মা, তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমার ছোট ভাই কামাল মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা আরেক ছোট ভাই শেখ জামাল, তাদের দুই স্ত্রী, আমার চাচা কাউকে রেহাই দেয়নি। আমাদের পরিবারের ১৮ জন সদস্য এবং কাজের লোকজনসহ সবাইকে হত্যা করে। এই হত্যার পর থেকেই এ স্লোগান (জয় বাংলা) নিষিদ্ধ হয়ে গেল।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাস করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাসী, তারা এটাকে ধরে রেখেছিল। একটি সময় নানা ধরনের সমালোচনা শুনতে হয়েছে। আমরা সত্যটা ধরে রাখতে পেরেছিলাম বলেই আজকে এটা জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আপনাদের ধন্যবাদ জানাই, আপনাদের মধ্য দিয়ে আমরা এটাই মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই, আমরা বিজয়ী জাতি, আমরা বিজয় অর্জন করেছি। মাথা নত করে আমরা চলি না। মাথা নত করে চলব না।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।